মিতা দাশ :
খুব তাড়া নিয়ে মিলা বইয়ের দোকানে ঢুকলো।বাসায় ফিরতে হবে খুব জলদি।রাতে বাইরে বের হওয়ার কোন নিয়ম নেই মিলা দের পরিবারে।
দোকানে ঢুকেই মিলা প্রকাশকের সাথে যে কথাবার্তা গুলো ছিলো সব শেষ করে নিচ্ছে দ্রুত। প্রকাশক কিন্তু বেশ কথা বলতে আগ্রহী।কি আর করা; মিলা কেও কিছু কথা বলে যেতে হচ্ছে। এর ভেতরে লাইব্রেরি তে ঢোকার পর থেকে একজন যুবক কে দেখা গেছে একটা চেয়ারে বসে বই পড়ছে।
মিলা দেখে নিলো,যুবকটা বই মনযোগ দিয়ে পড়ছে না,শুধু বইয়ের পাতা ই উল্টে যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছিলো কোন কারণে খুব মনের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছে। যার কিছুটা বই উল্টানো দেখে মিলা বুঝে নিলো।
প্রকাশক পরিচয় করিয়ে দিলেন, ইনি হচ্ছেন রুবেল পত্রিকা অফিসে আছেন একজন রিপোর্টার হিসেবে।
বরাবরই, মিলার রিপোর্টারদের ভালো লাগে।কারণ এরা প্রচুর পরিশ্রম করে,মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য এনে তারপর সেটা পত্রিকার পাতায় তুলে ধরে।একটা পত্রিকা বের করতে কত যে লেখা লাগে তা ভাবতে গেলেও কেমন জানি মাথা ঘুরে ওঠে।তবে রিপোর্টারদের কাজ কে মিলা সম্মান করে। ওদের মাঝে মাঝে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কাজ করতে হয়।কিন্তু বেশির ভাগ রিপোর্টার তেমন কোন সুযোগ বা মূল্যায়ণ পায় না।
পরিচয় হলো রুবেলের সাথে। প্রকাশকের পরিচয় ছাড়াও আরো কিছু কথা হলো।
হাসি মাখা মুখ, মিষ্টি চাহনী,সুন্দর বাচনভঙ্গি, আস্তে আস্তে কথা বলা ও সর্বোপরি সহজ সরল মনের মিশুক একজন মানুষ।
কতক্ষণ কথা চললো। রুবেল যুবকটি কবিতা লেখেন, গান করেন। মিলা ভাবলো ভালোই হয়েছে মাঝে মাঝে কথা বলা যাবে।
ঔখানে বসেই নাম ও ফেইসবুকে ফ্রেন্ড করে নেয়া হলো। কিছু চেহারা দেখার সাথে সাথে কেমন যেন আপন মনে হয়। মিলার কাছে ও তাই মনে হলো।সময় কম থাকার কারণে বের হয়ে যেতে হলো বাসায় ফেরার জন্য মিলাকে।
হঠাৎ পরের দিন ম্যাসেজে দেখতে পেলো নতুন একটা নামের থেকে। ম্যাসেজে আসলো,কেমন আছেন আপনি?
আজ সেই রুবেল হয়ে গেলো কাছের একজন।প্রতিদিন কিছু কিছু ম্যাসেজ হতো। আর এই ম্যাসেজে থাকতো মিলার প্রতি ভালোবাসার ডালা ভর্তি কথার ফুলঝুড়ি।এই প্রথম মিলা দেখা করতে বের হচ্ছে রুবেলের সাথে। পরণে লাল শাড়ি, মাথায় লাল গোলাপ, হাতে লাল চুড়ি, কপালে লাল টিপ, ঠোঁটে লাল লিপিস্টিক। মিলা নিজেকে নিজে আয়নায় দেখে অবাক ই হয়ে গেলো।মিলার চোখে আজ ভালোবাসার রং।রুবেল বিভিন্ন ভাবে ভালোবাসার কথা বললেও মিলা কোন উত্তর দেয়নি।আজ সে উত্তর জানাবে।কারণ আজ যে ভ্যালেন্টাইন ডে।এই দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকে যেন দুজনের নতুন জীবনে।
মিলা যখন সি আর বি তে পৌঁছালো তখন রুবেল একটু অন্য মনষ্ক হয়ে কি যেন ভাবছিলো।
হঠাৎ কানের কাছে চুড়ির রিনিঝিনি আওয়াজে তাকিয়ে সে হা হয়ে গেলো।
এত অপরুপা লাগছে মিলাকে।কালো খোলা চুল, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, কপালে লাল টিপ, পরনে লাল শাড়ি, হাতে লাল চুড়ি। এমনকি হাতের আঙুলের নকে লাল নেইলপলিশ। এত অপূর্ব লাগছে দেখতে রুবেল অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে।
মিলা বললো,কি হলো মুখে মাছি ঢুকবে।তাড়াতাড়ি মুখ বন্ধ করুন।
রুবেল তাড়াতাড়ি দাড়িয়ে মিলাকে বসতে দিয়ে বললো,এই প্রথম জানলাম কাওকে ভালোবাসলে আর সেই ভালোবাসার মানুষ যদি এত সুন্দর হয় তাহলে বুকে যে কি পরিমান সমুদ্রের ঢেউ তোলপাড় করে বলে বোঝাতে পারবো না।মিলাকে অবাক করে দিয়ে মিলার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে রুবেল একটা গোলাপ এনেছিলো, সেটা পকেট থেকে বের করে বললো,
মিলা আজ এমন ভালোবাসার দিনে আমায় আর ফিরিয়ে দিও না।লাল গোলাপে আর তোমার এত সুন্দর মন পাগল করা লাল শাড়ি পড়া সাজে আমার এই দুঃখী মন রাঙিয়ে দাও ভালোবাসার রঙে।গ্রহণ করো এই লাল গোলাপ। আমাদের জীবন হয়ে উঠুক এরকম রঙিন স্বপ্নময়।
Leave a Reply