কে এম রাজীব : মানুষ কতই স্বপ্ন নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকে। আর সে স্বপ্ন বুকে ধারণ করে পথ চলতে থাকে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা নামের সেই মানুষ গুলো, যারা সারা জীবন কষ্টকে সঙ্গী আর দুঃখকে চাদর বানিয়ে জীবন যাপন করে। জীবন চলার পথে ভালোমন্দ মিলিয়ে কত ঘটনা চোখে পড়ে। চোখে পড়ে দূর্ঘটনার মতো ঘটনা, চোখে পড়ে উচ্চ বিলাসী জীবন যাপনে অভ্যস্ত মানুষ গুলোর সুখে চলার ঘটনা, চোখে পড়ে সড়কের ফুটপাতে অনাহারে মানুষ গুলো ঘুমানোর দৃশ্য। তেমনি চোখে পড়েছে এক রিক্সা চালক নিজ কর্মকে অবসরে রেখে যাত্রী না নিয়ে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে মনোযোগ সহকারে পড়তে।
যাচ্ছিলাম নিজ কর্মে। হঠাৎ চোখে পড়ে এক রিক্সা চালক যাত্রী না নিয়ে একটি গাছের ছায়াতলে বসে রিক্সার সিটের নিচ থেকে একটি খবরের কাগজ হাতে নিয়ে মনোযোগ সহকারে পড়তে। ওসময় আমি একজন সাধারণ খবরের কাগজ পাঠক হিসেবে আমার নজর পড়ে তার মনোযোগি চেহারা আর শব্দ শিকারী চোখ দুটো তার হাতে থাকা খবরের কাগজের দিকে তাকিয়ে থাকার দৃশ্য। তখন তার পড়ার মগ্নতা দেখে আমার জানার বেশ কৌতুহল জাগলো। কিছুক্ষণ পর তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ভাই খবরের কাগজটি আজকের! জবাবে সে বলল, হ্যাঁ আজকের। জানতে চাইলাম কাগজের নাম কি, বলল বাংলাদেশ প্রতিদিন। বাংলাদেশ প্রতিদিন কি প্রতিদিন পড়া হয়? বলল হ্যাঁ। জানতে চাইলাম কতদিন যাবত এ খবরের কাগজটি পড়ছো, জবাবে বলল, দীর্ঘ সাত বছর যাবত এ পত্রিকা আমি নিয়মিত পড়ছি।এতে যে সংবাদ গুলো প্রকাশ করা হয়, তা পড়ার মতো এবং এখানে সব খবর থাকে তাই পড়ি। সব শেষে তার কাছে জানতে চাইলাম তুমি যে বাংলাদেশ প্রতিদিন পড়, তার সম্পাদক কে জানো! বলল নঈম নিজাম স্যার। অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলাম একটা সময় বেছে নিয়ে খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস এবং তার কথা শুনে।
বলছিলাম চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানাধীন আধুনগর গ্রামের বড়ুয়া পাড়ার লিটন বড়ুয়ার কথা।সে বর্তমানে পেশায় একজন রিক্সা চালক। স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় বসবাস করে লিটন।স্ত্রী বেসরকারি একটি হাসপাতালে নার্সের চাকরি করে। সন্তান ূুৃ দু’জনকে লালন পালন করে পাশের বাসায় থাকা এক পরিবার। এভাবেই চলে লিটনের জীবন সংসার।
লিটন পেশায় একজন রিক্সা চালক হলেও গত ১০ বছর আগে আধুনগর স্কুল থেকে এস এস সি পাস করে ঢাকার একটি ফ্রিজের দোকানে চাকরি করতেন।সেখানে দীর্ঘ ৮ বছর কাজ করার পর তাকে সে চাকরি হারাতে হয়। পরর্বতীতে চট্টগ্রামে এসে নগরীর জিইসি’র মোড়ের একটি প্রাইভেট ব্যাংকে পিয়নের চাকরি নেন।সেখানে এক বছর চাকরি করার পর সে চাকরিও হারাতে হয় লিটনের। পরে সংসারের খরচ যোগাতে চাকরির সন্ধানে দ্বারস্থ না হয়ে পেশা হিসাবে পথ বেচে নেন রিক্সা চালানোর কাজ। তবুও হাসি খুশি আর সুখে দুখে কাটে লিটনের জীবন। এধরনের অনেক লিটন অনাদরে ফোটা ফুল হয়ে পরে আছে এ জগতে। তাই উপ মহাদেশের বিখ্যাত জীবন মুখী প্রয়াত গানের সম্রাট ড. ভূপেন হাজারীকা তাঁর একটি গানের কথা বলেছেন, ” আমি দেখেছি অনেক গোলাপ বকুল ফুটে আছে থরে থরে, আবার দেখেছি না ফোটা ফুলের কলিরা ঝড়ে গেছে অনাদরে। প্রেমহীন ভালোবাসা দেশে দেশে ভেঙ্গেছে সুখের ঘর, পথের মানুষ আপন হয়েছে, আপন হয়েছে পর”।
Leave a Reply