সঠিক খবর ডেস্ক : খাবারের গুণগত মানতো মানছেনই না, বরং পণ্যের মোড়কে পণ্য উৎপাদনের বিবরণ দেওয়া থাকে যেন লোক দেখানো। আবার কারো নেই বিএসটিআইর অনুমোদন, পরিবেশের ছাড়পত্র আবার কারো অনুমোদন থাকলেও ভেজাল পণ্য উৎপাদন করছে অনবরত। চট্টগ্রামের এমন নামিদামি বেকারিগুলো রাষ্ট্র ও ভোক্তার সাথে প্রতারণা করে চলছে যুগের পর যুগ। মাঝে মাঝে ভোক্তা অধিদপ্তর, বিএসটিআই ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পরিচালিত মোবাইল কোর্টে ধরা পরে অর্থদণ্ড হলেও এটাকে লঘুদণ্ড হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা ফলে এসব অনিয়ম রোধ করা যাচ্ছে না। এসব অনিয়মের ফলে একদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, অন্যদিকে ভোক্তারা প্রতারিত হয়ে ঠকছেন দিনের পর দিন। বিএসটিআইয়ের অনুমোদন না থাকলেও পণ্যের মোড়কের গায়ে ব্যবহার করা হয় ভুয়া নিবন্ধন নাম্বার। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন মাস পযর্ন্ত এক বছরে এমন ২৬টি বেকারির তথ্য পাওয়া গেছে। এসব অপরাধের ফলে গত এক বছরে চট্টগ্রামের নামিদামি ২৫ বেকারি প্রতিষ্ঠানকে ১৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানাসহ আনোয়ারার গণি সওদাগর ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রতিষ্ঠানটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পণ্য উৎপাদনের জন্য সিলগালা করে দিয়েছে বিএসটিআই। এসব পণ্যের অধিকাংশই মানহীন ও ক্ষতিকর উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় বলে জানা গেছে। বিএসটিআইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অনুমোদনহীন পণ্যের জন্য জরিমানা গুনতে হয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- বায়েজিদ ক্যান্টসমেন্ট এলাকার বনফুল অ্যান্ড কোং-এর বিস্কুট, বাকলিয়া এলাকার ফুলকলি ফুড ইন্ডা. লি.-এর বান ও রসমালাই, হাজারি গলির মিঠাই সুইটস অ্যান্ড বেইক-এর ক্রিম বান, ফ্লেভারস প্রিমিয়াম সুইটস অ্যান্ড বেকার্সের নিমকি ও চিড়া ভাজা, মধুবন ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ইন্ডা. লিমিটেডের চুটকি, বান ও বিস্কুট, মেরিডিয়ান ফুড লিমিটেডের সস ও নুডুলস, ডুলসে সুইটস অ্যান্ড বেকারির পাউরুটি ও বিস্কুট, বিএসপি ফুড অ্যঅন্ড প্রোডাক্টসের ভেজিটেবল ঘি, আনোয়ারার গণি সওদাগর ফুড অ্যান্ড বেভারেজের চিপস ও চনাচুর, রূপসা ফুড প্রোডাক্টসের বিস্কুট, রয়েল বাংলা সুইটসের চিপস ও চনাচুর, পতেঙ্গার ওভেন ফ্রেশের কেক, প্যারামাউন্ট ফুড প্রোডাক্টসের বিস্কুট, আগ্রাবাদ তামান্না বেকারির বিস্কুট, আনোয়ারা উপজেলার নিউ ঢাকা বেকারির পাউরুটি, পটিয়া উপজেলার দোহা ফুডের বিস্কুট, মিরসারাই উপজেলার নিউ আল আমিন বেকারি অ্যান্ড কনফেকশনারির পাউরুটি ও বিস্কুট, নিউ মদিনা ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট কারখানার পাউরুটি ও বিস্কুট, হাটহাজারীর নিউ বি বাড়িয়া বেকারির পাউরুটি, বিস্কুট ও কেক, জিমি ফুডের পাউরুটি ও কেক, বাকলিয়ার হোসেন ফুড অ্যান্ড কোম্পানির কেক ও চুটকি, পাহাড়তলীর তাসনিম এন্টারপ্রাইজের ভিনেগার, হালিশহরের নিউ মডেল ফুডের বিস্কুট, ওয়াসা মোড়ের জুইবারা সুইটস অ্যান্ড বেকারির পাউরুটি, এনায়েত বাজার তোফা ফুডের পাউরুটিসহ আরো দুটি প্রতিষ্ঠানের বিস্কুট, বান ও রসমালাই।
এ ছাড়া উপজেলা রাউজানে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি অনুমোদনহীন বেকারী। এসব অবৈধ বেকারীগুলোকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার জরিমানা করা হলেও যথারীতি তারা প্রশাসনের নাকের ডগার ওপর দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে। নিরাপদে ভেজাল কার্য চালিয়ে যেতে এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা গ্রামেই এসব কারখানা গড়ে তুলেছে।
এ বিষয়ে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, চট্টগ্রামের অধিকাংশ বেকারির অনুমোদন নেই। কিছু প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন থাকলেও তারা অনুমোদনের বাইরে অতিরিক্ত সংখ্যক পণ্য উৎপাদন করে থাকে। মানহীন ও অনুমোদনহীন পণ্য কিনে একদিকে ক্রেতা যেমন আর্থিক ও স্বাস্থ্যগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারও রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে। আবার এসব পণ্য বাজারে সয়লাভের কারণে প্রকৃত খাদ্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের একাধিক কর্মকর্তা এসব অপকর্মের সাথে জড়িত। তারা যেগুলো অভিযান পরিচালনা করে। আবার কিছু ক্ষেত্রে নির্ধারিত কোটা দিতে গড়িমসি করলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানগুলো লোক দেখানো বলে মনে করছেন।
Leave a Reply