সঠিক খবর ডেস্ক : একজন সাহিত্যিক কল্পনার জগতে নিজেকে নিবেদিত করে বাস্তব বা অতিবাস্তব চিত্র ভাষার মাধ্যমে সুষম শব্দ সংযোজন করে সাহিত্যের চিত্র অঙ্কন করে থাকেন; পাঠক তা পাঠ করার সময় লেখকের ওই কল্পচিত্রটি পাঠকের মস্তিষ্কে সঞ্চারিত হয়ে ফুটে ওঠে। এই ফুটে উঠার বিষয়টি যতটা বাস্তবিক, গভীর ও আনন্দদায়ক, ওই রচনাই ততটা স্বার্থক ও সফল সাহিত্য হিসেবে পরিগণিত হয়ে ওঠে।
ভাষার মাধ্যমে চিত্রানুভূতি সৃষ্টি করা ভাষার একটি মাত্রই নিপুণতা। কুশলী ভাষা প্রয়োগে আমাদের পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের অনুভূতিই উদ্বুদ্ধ হতে পারে; সাথে সাথে পঠিত বিষয়টির একটি কল্পচিত্র আমাদের মস্তিষ্কে পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে, ফলে বাক্য পাঠের সাথে সাথে যেমন শব্দ উচ্চারিত হয় তেমনি কল্পচিত্র আমরা হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হই। এই কল্পচিত্র তৈরির মূল উপদান হলো কল্পনা।
যতই বাস্তব ঘটনা নিয়ে সাহিত্য রচনা করা হোক না কেন, কল্পনার আশ্রয় নিতেই হয়! বাস্তবতা দিয়ে সাহিত্য হয় না, যদি না কল্পনার আশ্রয় গ্রহণ না করা হয়।
এমনই একজন সাহিত্যিক যিনি এই সমাজকে কিছু দেবে বলে নিজেকে গড়ে তুলেছে তার আপন মহিমায়। তিনি হলেন কৌশিক বড়ুয়া শুভ। পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হলেও ছোটবেলা হতেই ছবি আঁকতে ভালোবাসতেন তিনি। ছবি আঁকার মোহটি যেন তাঁকে আষ্টেপৃষ্টে রেখেছে।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এমবিএ এর পাশাপাশি শিল্পী শওকত জাহানের ‘স্পেশাল আর্ট স্কুল’ হতে পাঁচ বছরের আর্ট কোর্স সম্পন্ন করেন কৌশিক।
ডিজিটাল আর্টকে প্রাধাণ্য দিয়ে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর শুরু করেন কল্পচিত্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেজবুকে সৃষ্টি করেন চিত্রশিল্প ও কল্পচিত্র দিয়ে তুমুল ঝড়। কল্পচিত্র নামে তাঁর আছে একটা ফেজবুক পেইজ।
তাঁর এই কল্পচিত্র পেইজের মাধ্যমে চট্টগ্রামের বিভিন্ন লোকেশনকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে মানুষের সামনে তুলে ধরেন, যা কল্পচিত্র জগতে সবার কাছে সমাদৃত হয়।
এছাড়া আশফাক নিপুণের পরিচালিত এবং মোশাররফ করিম অভিনীত হইচই এর ‘মহানগর’ সিরিজের উপর একটি ছবি এঁকে পরিচালক আশফান নিপুণ এর দৃষ্টিতে আসেন এবং ব্যাপক ভাবে সমাদৃত হন।
এছাড়াও বলিউড অভিনেত্রী শ্রুতি হাসান, বাংলাদেশের আরেফিন শুভ, সুনেরাহ বিনতে কামাল, তানজিয়া মিথিলা, নাজিফা টুসি, আয়েশা মাহমুদ তারাও বিভিন্ন সসময়ে কৌশিকের আঁকা তাদের ছবি নিজেদের অফিশিয়াল ইন্সটাগ্রাম স্টোরি হতে শেয়ার করেন।
কৌশিক বড়ুয়া শুভ’র মতে- ‘কল্পনা’ শব্দটি শুনলে, পড়লে কিংবা তাকালেই এর শব্দমূল ‘কল্প’ এর দিকেই দৃষ্টি ও মন নিবদ্ধ হয়। কল্পনা শব্দটির বহুবিধ প্রয়োগ এবং বিভিন্ন অর্থ লক্ষ্য করা যায়; যেমন: অনুষ্ঠানবিশেষ, হিন্দুপুরাণ মতে আটশ চৌত্রিশ কোটি বছর সময়; বেদাঙ্গ গ্রন্থবিশেষ; সংকল্প, সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা, শুরু এবং সমাপ্তির সীমারেখা, পন্থা ইত্যাদি আরো বহু অর্থ বুঝিয়ে থাকে।
তাঁর মতে- কল্পনা, স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা নামেও পরিচিত, এটা সৃজনশীল প্রতিচ্ছবি তৈরি করার ক্ষমতা, ধারণা এবং ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের অনুভূতির বাইরে মন থেকে অনুভব করা, দেখা ও শোনার অনুরূপ সরাসরি অনুভব। আলবার্ট আইনস্টাইন বলেন, কল্পনা, জ্ঞানের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। জ্ঞান সীমাবদ্ধ, কল্পনা সারা বিশ্ব ঘিরে।
কৌশিকের মতে- এই কল্পনা নামক তুলির দক্ষ ছোঁয়ায় তৈরি করা যায় যুগোপযোগী কল্পচিত্র; যা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে গতিশীল করে মানুষকে নিয়ে যায় আনন্দালোকে। দৃশ্যমান কল্পচিত্র কবির হদয়েরই ভাষা, অর্থাৎ কবিহৃদয়েরই চিত্রকল্প; তবে এর সাথে সংশ্লিষ্ট বাস্তব চিত্রগুলো চিত্রকল্প হিসেবে ছড়িয়ে থাকে সাহিত্যের পরতে পরতে। কোলাজের মতো চিত্রকল্পগুলো কবিতাটিকে পুঁথির মালার মতো গেঁথে রাখে, যা চোখ ও হৃদয় দুটোকেই আবিষ্ট করে।
সাহিত্যে নিজস্ব সৃজনশীল কল্পচিত্র কিংবা চিত্রকল্পই কবিকে বিশিষ্টতা দান করে, অন্যান্য থেকে করে আলাদা ও সৃষ্টিশীল। বর্তমানে এটা পরিষ্কারই বোঝা যাচ্ছে যে, কল্পচিত্র চিত্রকল্পের জায়গা করে নিচ্ছে; যা কি না সাহিত্য জগতে সৃষ্টি হচ্ছে এক অনন্য গতিপ্রবাহ। কল্পচিত্র হলো এক কথায় মানুষের অন্তরে গভীরভাবে ফুটে ওঠা একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন মানসচিত্র। সবচেয়ে বড় কথা হলো_ কল্পচিত্রের ব্যবহার দিন দিন ক্রমশ বেড়েই চলেছে, তাই ক্রমবর্ধমান এর ভবিষত অতি উজ্জ্বল।
Leave a Reply