নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক (ইঞ্জিঃ) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যুবরণ বা পঙ্গুত্ববরণ তা কখনো আমাদেও কাম্য নয়।
প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ও অদক্ষ চালক দ্বারা গাড়ি চালানোর কারণে সড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। নিরাপদ সড়ক উপহার দেয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব। এ জন্য সারাদেশে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলে আসছে। আবার যান্ত্রিক ত্রুটি যুক্ত ও ফিটনেসবিহীন অসংখ্য লক্কর ঝক্কর গাড়িও সড়কে চলাচল করছে। এগুলোর জন্য শুধু গাড়ির চালক-হেলপার দায়ী নয়, যিনি গাড়ির মালিক তাকেও এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। গাড়ি নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। নিজেরা সচেতন না হলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয়। শুক্রবার ( ২২ অক্টোবর) সকাল ১০টায় নগরীর ষোলশহরস্থ এলজিইডি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) আয়োজিত জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২১ এর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে-“গতিসীমা মেনে চলি, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করি”।
তিনি বলেন, গাড়ির চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের জন্য দেশের ২৫টি জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ শুরু করেছেন। কয়েকটি জেলায় ভূমি অধিগ্রহন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আশাকরি কিছু দিনের মধ্যে চট্টগ্রামেও আমরা এর সুফল দেখতে পাবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ছত্রধর ত্রিপুরা বলেন, মোটরযান আইন, ট্রাফিক সাইন ও ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশ মেনে গাড়ী চালাতে হবে। মাদক সেবন বা চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ী চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে। শুধু বড় গাড়ি নয়, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিক্সা, নছিমন, করিমন ও অন্যান্য গাড়ি চালকদেরকে নিয়োগ দেয়ার আগে তাদেরকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবদুল্লাহ আল-মাসুম বলেন, ছাত্র-ছাত্রী, রাস্তা ব্যবহারকারী, সড়কে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে কার আগে কে যাবে এ ধরনের মনোভাব পরিহার করতে হবে। গাড়ি-চালক-হেলপারসহ সকলে সচেতন হলে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসলে দুর্ঘটনা অনেকটা হ্রাস পাবে। যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই তাদেরকে প্রশিক্ষণ শেষে লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালাতে হবে। রাস্তায় অবহেলায় দুর্ঘটনার জন্য যাতে কেউ মারা না যায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সোচ্চার থাকতে হবে।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও এগুলোর তেমন ব্যবহার হয় না। মানুষ গাড়িকে হাত উঁচিয়ে সঙ্কেত দিয়ে দৌঁড়ে রাস্তা পারাপার হয়। এতে মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। এ ধরনের মনমানসিকতা পরিহার করে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে সকলকে আন্তরিক ও সচেতন হতে হবে। যাচাই-বাচাই করে ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস প্রদানসহ গ্রাহকদের হয়রানিমুক্ত সেবা দেয়ার জন্য বিআরটিএ’র প্রতি আহবান জানান বক্তারা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তারের সভাপতিত্বে, আবৃত্তিকার ফারুক তাহের ও দীপা দাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত জাতীয় নিরাপদ সড়কে দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক (ইঞ্জিঃ) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ছত্রধর ত্রিপুরা, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবদুল্লাহ আল-মাসুম, বিআরটিএ’র এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট একিমিত্র চাকমা, চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রপের মহাসচিব মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অলি আহমদ ও চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআরটিএ চট্টমেট্টো-২ সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) রায়হানা আক্তার উর্থী। নিরাপদ সড়ক দিবসের তাৎপর্য্য তুলে ধরেন বিআরটিএ চট্টগ্রাম জেলা সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এমডি শাহ আলম। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সদস্য সাংবাদিক রনজিত কুমার শীল। আলোচনা সভায় বিআরটিএ’র বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সওজ’র কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply