শাহনেওয়াজ শাহ্, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: বছর ঘুরে আবারো এলো রসের মাস জৈষ্ঠ। প্রতিবছরই জৈষ্ঠ মাসকে মধু মাস বলা হয়। বাঙালি জাতির ঐতিহ্যের সাথে মধু মাসের বিশেষ একটি গুরুত্ব বহন করে। মধু মাস খ্যাত জৈষ্ঠ মাস আসলে আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, জামসহ বাহারী বিভিন্ন ফল একত্রিত ভাবে পাঁকা শুরু করে। এ মধু মাসের সময় ফলের সু-ঘ্রানে মুখরিত থাকে আকাশ বাতাস।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ফল উৎপাদনের বিশেষ চাহিদা থাকলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার সকল ধরনের ফল বিভিন্ন বাড়ির আঙ্গিনায় একত্রিত ভাবে ফলতে দেখা যায়। আবার বিভিন্ন কৃষকরা বাণিজ্যিক ভাবে লিচু, আম, কাঁঠাল, আনারসসহ বিভিন্ন ফল চাষ করা শুরু করেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশেপাশে কয়েকটি জেলায় তুলনামূলকভাবে ফল চাষ কম হওয়ার কারণে বিজয়নগর উপজেলায় উর্বর মাঠি থাকার কারনে ফল চাষের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কুমিল্লা, ফেনী, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নারী-পুরুষ স্ব-পরিবারে দলবেঁধে বিভিন্ন গাড়ি নিয়ে ঘুরতে এসে বাগান থেকে নিজের হাতে বিভিন্ন ফল পেরে খেয়ে যায় ও সাথে নিয়ে যায়।
অনেক দর্শনার্থী এ প্রতিবেদককে জানান, নিজের হাতে বিভিন্ন বাগান ঘুরে ইচ্ছামত বাগান থেকে বিভিন্ন ফল পেড়ে খাওয়ার মজাই আলাদা।
তারা আরো জানান, কাজের ফাঁকে ইট পাথরের শহর ছেড়ে বিভিন্ন মনোরম পরিবেশে ছবি তোলা, অবসর সময় কাটানো,প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানোসহ বাগানের স্ব-শরীরে পরিবার,বন্ধু্বান্ধব নিয়ে ঘুরে গেলে মনটা অন্যরকম চাঙ্গা হয়।পরবর্তীতে নিজের কর্ম ক্ষেত্রে মনোযোগ দিয়ে আবারো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া যায়।
বিজয়নগর উপজেলার বিশেষ করে হরষপুর, পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, চম্পকনগর এবং সিংগারবিল ইউনিয়নের বিভিন্ন আঞ্চলে এই সব ফলের চাষ বেশী হয়।সেই ফল বাগানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসছে। যেন একটা উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
হবিগঞ্জের স্ব-পরিবারে ঘুরতে আসা কাউসার আহাম্মদ জানান, লিচু, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফল সব সময় বাজার থেকে কিনে খেলেও বাগানে এসে ফ্রেস সু-সাধু ফল নিজের হাতে পেরে খাওয়ার তৃপ্তি অন্যরকম। তাই স্ব-পরিবারে ঘুরতে এসে খুব ভাল লাগছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,এ বছর বিজয়নগরে বিভিন্ন জাতের লিচু ৪১৪ হেক্টর,স্থানীয় জাতের কাঁঠাল ৩৪৩ হেক্টর, বিভিন্ন জাতের আম ৭৫ হেক্টর, স্থানীয় জাতের পেঁয়ারা ৪২ হেক্টর, মাল্টা ৬৫ হেক্টর, লটকন ১৮ হেক্টর, বিভিন্ন জাতের বড়োই ৩৯ হেক্টর আনারস ও জামসহ আরো বিভিন্ন প্রকার ফলের আবাদ হয়ে থাকে।
বিজয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ মীর্জা মোহাম্মদ হাছান জানান, জৈষ্ঠ মাসে বিজয়নগরে বিভিন্ন ফল উৎপানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অঞ্চলের বেপারী ও দর্শনার্থীর আগমনকে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য পুলিশের সর্বমোট ১০ টি মোবাইল ঠিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আশা করছি আগামীতেও আমাদের কঠোর নজরদারির কারণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহামেদ জানান, জৈষ্ঠ মাসে বিজয়নগরে বিভিন্ন ফল উৎপানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অঞ্চলের বেপারী ও দর্শনার্থীর আগমনকে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য ইতিমধ্যেই থানা পুলিশকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়াও স্থানীয় চেয়ারম্যান, নায়েবসহ সবাইকে নজরদারি বৃদ্ধি করে নির্বিঘ্নে মৌসুম শেষ করার জন্য বলা হয়েছে। এর পরেও যদি কারো সমস্যা মনে হলে আমাকে অবগত করলে আমি তাতক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
Leave a Reply